চাঁনপুর -বাগড়া সড়ক। এই সড়ক দিয়ে যাতায়াতকারীদের চোখে পড়ে দক্ষিণগ্রাম বিলের মাঝে ফুটে আছে নীলাভ্র হাজারো পদ্মফুল। বিলের মাঝে গেলেই মনে হবে পদ্মফুলগুলো প্রাণোচ্ছল হাসি দিয়ে স্বাগত জানাচ্ছে। পুরো বছরজুড়ে কুমিল্লা বুড়িচং উপজেলার দক্ষিণগ্রামের বিলে পদ্মফুল ফুটে থাকলেও শরৎকালেই পদ্মগুলো তার সমস্ত সৌন্দর্য্য উজাড় করে দিয়ে প্রকৃতি প্রেমীদের চোখ সার্থক করে তোলে। বিলের মাঝে গেলে যে কোন দর্শনার্থীই মুগ্ধ হয়ে যাবে। উপরে শরতের নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলা আর নিচে ঝিরঝির দখিনা বাতাসের সাথে দোল খায় একেকটা পদ্ম। নীলাভ্র ফুলগুলোর সাথে ভ্রমর-মৌমাছি-ডাহুক,বকসহ নানা রঙ্গ-বেরঙ্গের পাখপাখালিরও রয়েছে অনিন্দ্য মিতালী ।
সরেজমিনে ঘুরে ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়,বুড়িচং উপজেলার দক্ষিণগ্রাম বিলের মাঝে শতাধিক একর জমিতে দীর্ঘ বছর ধরে প্রকৃতিগতভাবেই পদ্মফুল ফুটে থাকে। এখানে আশেপাশের জমিগুলোতে ধান জন্মালেও পদ্মফুল ফুটে থাকার জমিগুলোতে বারো মাস কোমর অবধি পানি জমে থাকে। কলের নাঙ্গল কাদায় দেবে যায়, এতে করে কৃষকরা ধান উৎপাদন করতে পারে না। সম্ভবত এ সুযোগেই এখানে পদ্মরা দলবদ্ধ হয়ে ফুটে থাকে। বিলের মাঝে পদ্মফুল নিয়ে খেলছিলো রিয়াদ ও তার ছোট ভাই আহাদ। পঞ্চম শ্রেণীতে পড়–য়া রিয়াদ জানায়,বিলের মাঝে সারা বছর পানি থাকে। এখানে ছোট মাছ পাওয়া যায়। আর রাতের বেলা অনেক পাখি আসে বিলে। পদ্মফুলের মাঝে ঘুরে ঘুরে মাছ খায় আর সারারাত কিচিরমিচির শব্দে মুখরিত করে রাখে। বিলের পাশেই টিনের ঘরটি দেখিয়ে রিয়াদ বলে ওইটা আমাদের ঘর। আমরা স্কুল থেকে ফিরেই (জলায়) পদ্মফুলের বিলে চলে আসি। হাত জাল দিয়ে মাছ ধরি। মাছ ধরা শেষ হলে পদ্ম আর শাপলা ফুল নিয়ে বাড়ি যাই। রিয়াদ জানায়, আমরা যখন খুব সকালে ঘুম থেকে উঠি তখন ঝাঁকে ঝাঁকে পাখিগুলো সীমান্তের বনের দিকে চলে যায়।তবে অনাদর-অযতেœ ফুটে থাকা এসব পদ্মফুলগুলো হতে পারে কৃষকদের আয়ের উৎস। নগরীর ফুলের দোকানে সারা বছরই পদ্মফুলের চাহিদা থাকে। তবে সঠিক পরিচর্যা পেলে আরো বেশী পদ্ম ফুল ফুটনো যাবে পাশাপাশি তথ্য উপাত্ত দিলে কৃষকরা বিষয়টা অনুধাবধ করে পদ্মফুলকে অর্থকরী হিসেবে উৎপাদন করতে পারবে। শুধুমাত্র সঠিক পথ না জানার কারণে অযতেœ গড়ে উঠা শ্বেতশুভ্র-নীলাভ্র পদ্মগুলো জমিতেই ঝরে যায়।
এ বিষয়ে কথা হয় বুড়িচং উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সুলতানা ইয়াসমিনের সাথে। তিনি বলেন, আসলে আমি শুনেছি দক্ষিণ গ্রামের বিলের পতিত জমিতে পদ্মফুল ফুটে। ওই এলাকার জন্য যিনি দায়িত্বরত আছেন তাকে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে বলবো। পদ্মফুলের যে চাহিদা আছে এবং ভালোভাবে যতœ করলে এ ফুলগুলোও যে অর্থকরী হয়ে উঠতে পারে বিষয়টি কৃষকদেরকে অবগত করা হবে। আশা করি কৃষকরাও আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারবে । পতিত জমিগুলো কৃষকদের জন্য অভিশাপ থেকে আর্শিবাদে রুপান্তরিত হবে।
তবে পতিত জমিতে ফুটে থাকা পদ্মফুলের বিষয়ে কৃষকদের জন্য সম্ভব যে কোন সহযোগিতা করতে প্রস্তুত বুড়িচং উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মোস্তফা। তিনি বলেন,দক্ষিগ্রাম বিলটি রাজাপুর ইউনিয়নের অর্ন্তগত। আমি নিজে দেখেছি বিলটি ও বিলের মাঝে ফুটে থাকা পদ্মফুল। খুব সুন্দর লাগে। যেসব কৃষকদের জমিতে এই পদ্মফুল ফুটে তারা চাইলে ফুলগুলো যেন বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন ও বিক্রয় করতে পারে আমি সব রকমের সহযোগিতা করবো।